মাইক্রোসফট গুগলের এআই-চালিত সার্চ অভিজ্ঞতার বিকল্প হিসেবে চালু করেছে ‘বিং জেনারেটিভ সার্চ’। জুলাই মাসে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর, এটি অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে সব মার্কিন ব্যবহারকারীর জন্য ধীরে ধীরে চালু করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীরা সহজেই এটি সক্রিয় করতে পারেন ‘Bing generative search’ লিখে সার্চ করে। পাশাপাশি, মাইক্রোসফট তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের (informational queries) জন্য আরও সহজে এই ফিচারটি ব্যবহারের অপশনও যোগ করেছে।
বিং জেনারেটিভ সার্চ মূলত বিভিন্ন এআই মডেলের সমন্বয়ে তৈরি, যা ইন্টারনেট জুড়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি সারাংশ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি সার্চ করে “প্রোগ্রামিং কি ?” তাহলে বিং জেনারেটিভ সার্চ শুধু এই চলচ্চিত্র ঘরানার ইতিহাস ও উদাহরণসমূহের একটি সারাংশই দেখাবে না, বরং সঙ্গে থাকবে সংশ্লিষ্ট উৎসের লিংকও।
গুগলের এআই ওভারভিউ ফিচারের মতোই, বিং-এও ব্যবহারকারীরা চাইলে ঐতিহ্যবাহী সার্চ ফলাফলে ফিরে যেতে পারবেন এবং এআই-জেনারেটেড সারাংশ বাদ দিতে পারবেন।
তবে বিং জেনারেটিভ সার্চের সক্ষমতা শুধু প্রশ্নের সরাসরি উত্তর খুঁজে পাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রশ্নের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করে, লক্ষ লক্ষ উৎস থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য মেলায় এবং এআই-প্রচলিত একটি নতুন লেআউটে ব্যবহারকারীর সার্চের চাহিদা আরও সঠিকভাবে পূরণ করার চেষ্টা করে। মাইক্রোসফটের মতে, এই ফিচারটি তাদের ২০২৩ সালে চালু করা এআই-চালিত চ্যাটের আরও উন্নত সংস্করণ।
তবে এআই-চালিত সার্চ ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমস্যাও দেখা গেছে। গুগলের এআই ওভারভিউ যেমন ভুলভাবে পিজ্জায় আঠা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিল, অন্যান্য এআই সার্চ ইঞ্জিনের ভুল তথ্য দেওয়ার ঘটনা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে আর্ক সার্চ (একটি ব্রাউজার) এক সাংবাদিককে জানিয়েছিল যে কাটা আঙুল আবার গজাবে। এছাড়া, কিছু এআই সার্চ প্ল্যাটফর্ম তথ্যের মূল উৎসগুলোকে সঠিকভাবে কৃতিত্ব না দিয়ে, সরাসরি তথ্য প্রকাশ করেছিল।
এআই-জেনারেটেড সারাংশ প্রকাশকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে, কারণ এটি তাদের ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গুগলের এআই ওভারভিউ প্রায় ২৩-২৪% পর্যন্ত প্রকাশকের ট্রাফিককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, কারণ সারাংশে সরাসরি তথ্য দেওয়া হলেও লিংকগুলোতে ক্লিক করার প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
মাইক্রোসফট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা জেনারেটিভ সার্চের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ট্রাফিকের উপর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবে। জুলাই মাসে তারা জানিয়েছিল যে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বিং জেনারেটিভ সার্চ ওয়েবসাইটগুলোতে ক্লিকের সংখ্যা বজায় রেখেছে। তবে, আজকের ঘোষণায় সেই গবেষণার কোনো আপডেট দেওয়া হয়নি।
যদিও বিং-এর সার্চ অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ গুগলের তুলনায় কম প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ গুগল সার্চ মার্কেটে একটি বিশাল আধিপত্য বজায় রেখেছে। স্ট্যাটিসটার সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুগলের বিশ্বব্যাপী সার্চ মার্কেট শেয়ার ছিল ৮১.৯৫%, যেখানে বিং-এর শেয়ার মাত্র ১০.৫১%।
মাইক্রোসফটের এআই-ভিত্তিক সার্চের এই নতুন পদক্ষেপের ফলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে এবং ব্যবহারকারীদের এআই-চালিত সার্চের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।